1. ইয়া চণ্ডী
  2. বাজলো তোমার
  3. শিশিরে শিশিরে
  4. জাগো তুমি জাগো
  5. আজি শঙ্খে শঙ্খে
  6. দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী
  7. জয় জয় জপ্য
  8. একবার বিরাজ গো মা
  9. জয়ন্তী মঙ্গলা কালী

১) ইয়া চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী

যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী ।

শক্তিঃ শুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী যা সিদ্ধিলক্ষ্মী পরা

সা দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী ।।


চণ্ডীপাঠ: আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর;

ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।

আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।

তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃণ্ময়ীতে আবাহন।

আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।


২) বাজলো তোমার আলোর বেণু,

মাতলো রে ভুবন

বাজলো তোমার আলোর বেণু..

আজ প্রভাতে,

সে সুরও শুনে খুলে দিনু মন।

বাজলো, বাজলো

বাজলো তোমার আলোর বেণু,


অন্তরে যার লুকিয়ে রাজে

অরুণ-বীণায় সে সুর বাজে

এই আনন্দ’যজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।

মাতলো রে ভুবন,

বাজলো তোমার আলোর বেণু

আজ সমীরণ আলোয় পাগল

নবীনও সুরেরও লীলায়,

আজ শরতে আকাশবীণায়

গানের মালা বিলায়।

তোমায় হারা জীবনও মম

তোমারই আলোয় নিরুপম

ভোরেরও পাখি ওঠে গাহি

তোমারই বন্দন।

মাতলো রে ভুবন,

বাজলো, তোমার, আলোর বেণু ॥


চণ্ডীপাঠ: মহামায়া সনাতনী, শক্তিরূপা, গুণময়ী।

তিনি এক, তবু প্রকাশ বিভিন্ন—

দেবী নারায়ণী,

আবার ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী,

কখনো মহেশ্বেরী রূপে প্রকাশমানা,

কখনো বা নির্মলা কৌমারী রূপধারিণী,

কখনো মহাবজ্ররূপিণী ঐন্দ্রী,

উগ্রা শিবদূতী,

নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা,

তিনিই আবার তমোময়ী নিয়তি।

এই সর্বপ্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে, সপ্তলোক তাই আনন্দমগ্ন।


৩) শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী

শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী।

শিউলি ঝরানো দিন আনে সে,

শিউলি ঝরানো দিন আনে সে,

চিরদিনের বাণী

ভোরের আগমনী।

শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী।

সোনার আলোয় জাগবে পৃথিবী,

বাজবে আলোর বাঁশি।

সোনার আলোয় জাগবে পৃথিবী,

বাজবে আলোর বাঁশি।

আকাশ পটে মহামায়ার,

ভুবন মোহিনী হাসি।

দিকে দিকে আজ উঠবে বেজে,

দিকে দিকে আজ উঠবে বেজে,

মায়ের পদধ্বনি।

শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী

বিশ্ব আজিকে ধ্যানমগ্না, উদ্ভাসিত আশা,

বিশ্ব আজিকে ধ্যানমগ্না, উদ্ভাসিত আশা।

তাপিত তৃষিত ধরায় জাগবে,

প্রাণের নতুন ভাষা।

মৃন্ময়ী মা আবির্ভূতা

মৃন্ময়ী মা আবির্ভূতা, অসুরবিনাশিনী।

শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী।

শিউলি ঝরানো দিন আনে সে,

শিউলি ঝরানো দিন আনে সে,

চিরদিনের বাণী

ভোরের আগমনী।

শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী।


চণ্ডীপাঠ: হে ভগবতী মহামায়া, তুমি ত্রিগুণাত্রীকা 

তুমি রজগুনে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগদেবি, সপ্তগুনে বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী

তব গুণে শিবের বনিতা পার্বতী, 

আবার ত্রিগুণাতিত কুঁড়ি-অবস্থায় তুমি অনিরবচনিয়া;

অপার মহিমময়ী পরম ব্রহ্মময়ীশী দেবী, ঋষি কাত্যায়ন এর কন্যা কাত্যায়নী-

তিনি কন্যাকুমারী আখ্যাতা দুর্গী, তিনি আদিশক্তি আগমনত সিদ্ধ-মূর্তিধরি দুর্গা

তিনি দাখ্যায়নী সতী, দেবী দুর্গা

নিজ-দেহ সম্ভুত ত্যেজ-প্রভাবে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা

এই ঊষা লগ্নে হে মহাদেবি তোমার উদ্বোধন-

বাণীর ভক্তির রসপূর্ণ-বরণ কমল আলোক শতদল মেলে বিকশিত হোক দিকে-দিকান্তে

হে অমৃতজ্যোতি, হে মা দুর্গা, তোমার আবির্ভাবে ধরণী হোক প্রাণময়ী

জাগো… জাগো জাগো মা…


৪) জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা,

জাগো দশপ্রহরণধারিণী,

অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।

প্রণমি বরদা অজরা অতুলা

বহুবলধারিণী রিপুদলবারিণী জাগো মা।

শরণময়ী চন্ডিকা শংকরী জাগো, জাগো মা,

জাগো অসুরবিনাশিনী তুমি জাগো।।


চণ্ডীপাঠ: দেবী চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী

তিনি নিত্যা, তার আদি নেই, তার প্রাকৃত মূর্তি নেই,

এই বিশ্বের প্রকাশ তার মূর্তি।

নিত্যা হয়েও অসুর-পিড়ীত দেবতা রক্ষণে তার আবির্ভাব হয়।

দেবীর শাশ্বত অভয়-বানী “ইত্থং যদা যদা বাধা, দানবোত্থা ভবিষ্যতি।

তদা তদাবতীর্যাহং, করিষ্যাম্যরি সংক্ষয়ম”।


৫) আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও, জননী এসেছে দ্বারে | সপ্তসিন্ধু কল্লোলরোল
সপ্তসিন্ধু কল্লোলরোল বেজেছে সপ্ততারে
ওগো, জননী এসেছে দ্বারে
আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও, জননী এসেছে দ্বারে ||

সুর সপ্তক তুলেছে তান সপ্তঋষির গানে
সপ্তসর্গে দুন্দুভি ঘোষে সপ্তগ্রহের টানে
অন্তরে আজ সপ্তসুরের নব-আগমনী স্বরে
ওগো, জননী এসেছে দ্বারে ||সাতরাঙা রবি রামধনু হাতে বরণের বাণ হানে
সপ্তকোটি সুসন্তান বিজয়মাল্য আনে
সাতরাঙা রবি রামধনু হাতে বরণের বাণ হানে
সপ্তকোটি সুসন্তান বিজয়মাল্য আনে
এলো সপ্ততীর্থ একই সাথ হয়ে রীতিমন্দির দ্বারে
তুলে নাও বুকে তারে
ওগো জননী এসেছে দ্বারে ||


চণ্ডীপাঠ: এদিকে কালান্তরে দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ মহিষাসুরের পরাক্রমে দেবতারা স্বর্গের অধিকার হারালেন। অসুরপতির অত্যাচারে দেবলোক বিষাদব্যথায় পরিগ্রহণ হয়ে গেল।

দেবগণ ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন।

বিশ্বযোনি বিষ্ণু রুদ্রের বদন থেকে তেজোরাশি বিচ্ছুরিত হল; ব্রহ্মা ও দেবগণের আনন থেকে তেজ নির্গত হল।

এই পর্বতপ্রমাণ জ্যোতিপুঞ্জ প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দেদীপ্যমান কিরণে দিঙ্‌মণ্ডল পূর্ণ করে দিলে।

ওই তেজরশ্মি একত্র হয়ে পরমা রূপবতী দিব্যশ্রী মূর্তি উৎপন্ন হল….
…..তিনিই জগন্মাত্রিকা মহামায়া—


৬) দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

দেবী দুর্গে জগত জননী

তুমি মা মঙ্গলকারিণী।

দেবী দুর্গে জগত জননী

তুমি মা মঙ্গলকারিণী।

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

দশ ভূজা দশ শাস্ত্র শালিনী

মধু কৈটব সংহারিণী।

আ আ আ আ আ আ আ…

দশ ভূজা দশ শাস্ত্র শালিনী

মধু কৈটব সংহারিণী

অদ্বিতীয়া তুমি অনন্যা

অদ্বিতীয়া তুমি অনন্যা

ভবানী মা দুঃখহারিণী

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

শুভ নিশুম্ভ দানব দলনী

ভক্তি মুক্তি দায়িনী।

আ আ আ আ আ আ আ…

শুভ নিশুম্ভ দানব দলনী

ভক্তি মুক্তি দায়িনী

যোগ প্রসবিনী মহা যোগিনী

যোগ প্রসবিনী মহা যোগিনী

চন্ডিকে মা শিবানী

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী—

–মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।

সত্য গুণে মহা সরস্বতী

রজো গুণে মহা লক্ষ্মীরূপিনী।

আ আ আ আ আ আ আ…

তমো গুণে মহা দুর্গা তুমি

মোহমায়া গো সনাতনী।

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী

মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী
মহিষাসুরমর্দিনী, জয় মা দুর্গে।


চণ্ডীপাঠ: দেবীর অক্ষয় কৃপাকণা পেয়ে সপ্তলোক আনন্দিত।

প্রথম কল্পে দেবী কাত্যায়ান-নন্দিনী কাত্যায়নী, অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডারূপে মহিষমর্দন করেন;

দ্বিতীয় ষোড়শভুজা ভদ্রকালীর হতে মর্দিত হয় মহিষ;

আর তৃতীয়ৈঃ বর্তমানকল্পে দশভুজা দুর্গারূপে মহাদেবী সুসজ্জিতা মহিষমর্দিনী।


৭) জয় জয় জপ্য জয়ে জয় শব্দ পরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে

ঝণঝণ ঝিংঝিমি ঝিংকৃতনূপুর শিঞ্জিতমোহিত ভূতপতে ।

নটিত নটার্ধ নটী নট নায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে

জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।। 

অয়ি সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিযুতে

শ্রিতরজনী রজনী রজনী রজনী রজনীকর বক্‌ত্রবৃতে।

সুনয়ন বিভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমরাধিপতে

জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।।

কনকলসৎকল সিন্ধুজলৈরনুষিঞ্চতি তে গুণরঙ্গভুবং

ভজতি স কিং ন শচীকুচকুম্ভ তটীপরিরম্ভ সুখানুভবম্‌।

তব চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাসি শিবম্‌

জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।।


চণ্ডীপাঠ: শ্রীশ্রীচণ্ডিকা গুণাতীতা ও গুণময়ী।

সগুণ অবস্থায় দেবী চণ্ডিকা অখিলবিশ্বের প্রকৃতিস্বরূপিণী।

তিনি পরিণামিনী নিত্যার্দিভ্যর্চৈতন্যসৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় যে শক্তির মধ্য দিয়ে ক্রিয়াশীলরূপে অভিব্যক্ত হন, সেই শক্তি বাক্‌ অথবা সরস্বতী;

তাঁর স্থিতিকালোচিত শক্তির নাম শ্রী বা লক্ষ্মী;

আবার সংহারকালে তাঁর যে শক্তির ক্রিয়া দৃষ্ট হয় তা-ই রুদ্রাণী দুর্গা।

একাধারে এই ত্রিমূর্তির আরাধনাই দুর্গোৎসব।

এই তিন মাতৃমূর্তির পূজায় আরত্রিকে মানবজীবনের কামনা, সাধনা সার্থক হয়, চতুর্বর্গ লাভ করে মর্তলোক।


৮) একবার বিরাজ গো মা হৃদি কমলাসনে।

তোমার ভুবন-ভরা রূপটি একবার দেখে লই মা নয়নে।।

তুমি অন্নপূর্ণা মা শ্মশানে শ্যামা,

         কৈলাসেতে উমা, তুমি বৈকুন্ঠে রমা,

ধর বিরিঞ্চি-শিব-বিষ্ণুরূপ সৃজন-লয়-পালনে।।

তুমি পুরুষ কি নারী, বুঝিতে নারি।

         স্বয়ং না বুঝালে তা কি বুঝিতে পারি।

তুমি আধা-রাধা-আধা-কৃষ্ণ সাজিলে বৃন্দাবনে।।

দুঃখ-দৈন্যহারিণী, চৈতন্যকারিণী
অন্য কিছু চাই না বিনা চরণ দু’খানি,

আমি প্রেম-সরোজে সাজাব পদ বাসনা মনে মনে।।


চণ্ডীপাঠ: ষড়ৈশ্বর্যময়ী দেবী নিত্যা হয়েও বারংবার আবির্ভূতা হন।

তিনি জগৎকে রক্ষা ও প্রতিপালন করেন।

দেবীর করুণা অসীম;

বিধাতৃ বরদার করুণার পুণ্যে বিশ্বনিখিল বিমোহিত;

অমৃতরসবর্ষিণী মহাদেবীর অমল রূপের সুষমা প্রতিভাত ধরিত্রীর ধ্যান গরিমায়।


৯) জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।

মধুকৈটভবিধ্বংসি বিধাতৃ-বরদে নমঃ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। 

মহিষাসুরনির্ণাশি ভক্তনাং সুখদে নমঃ ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।